পরিচিতি
কাজকরে জীবনে বাঁচতে শেখা - বাংলাদেশ সোসাইটি ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক পরিচালিত একটি উদাহরণস্বরূপ সামাজিক প্রতিষ্ঠান
ভূমিকা:
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং কর্মজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে, যার মধ্যে কাজকরে জীবনে বাঁচতে শেখা - বাংলাদেশ সোসাইটি অন্যতম। এই সমিতি ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক পরিচালিত এবং সদস্যদের পণ্য ঋণ প্রদান করে তাদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এর মাধ্যমে সমিতি সদস্যদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে কাজ করছে, পাশাপাশি একটি ন্যায়সঙ্গত এবং শুদ্ধ আর্থিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করছে।
প্রতিষ্ঠা ও উদ্দেশ্য:
কাজকরে জীবনে বাঁচতে শেখা - বাংলাদেশ সোসাইটি প্রতিষ্ঠা উদ্দেশ্য ছিল কর্মজীবী মানুষের জন্য একটি সমবায় ভিত্তিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করা, যা শরীয়াহ মোতাবেক পরিচালিত হয়। সমিতির মূল লক্ষ্য হলো তাদের সদস্যদের সুদবিহীন ঋণ প্রদান, যাতে তারা নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করতে পারে এবং একটি শক্তিশালী ও স্বাবলম্বী জীবন গড়তে সক্ষম হয়। এই সমিতি সামাজিক সুরক্ষা এবং আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে কর্মজীবী জনগণের জন্য একটি আশার আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছে।
ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক পরিচালনা:
কাজকরে জীবনে বাঁচতে শেখা - বাংলাদেশ সোসাইটি ইসলামী শরীয়াহ অনুসরণ করে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এখানে সুদবিহীন ঋণ প্রদান করা হয়, যা ইসলামী আর্থিক ব্যবস্থার মূলনীতি অনুযায়ী সঠিক। সুদের পরিবর্তে, সদস্যরা প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য ঋণ গ্রহণ করতে পারেন, যেগুলো তারা পরবর্তীতে শর্ত অনুযায়ী শোধ করে থাকেন। এই পণ্য ঋণ ব্যবস্থাপনায় সমিতি নিশ্চিত করে যে কোনো ধরনের অবৈধ উপার্জন বা ঋণ আদান-প্রদান ঘটছে না, এবং তা শরীয়াহ অনুসরণ করে পরিচালিত হচ্ছে।
প্রধান কার্যক্রম ও সেবা:
১.পণ্য ঋণ প্রদান: কাজকরে জীবনে বাঁচতে শেখা - বাংলাদেশ সোসাইটি সদস্যদের পণ্য ঋণ প্রদান করে থাকে, যাতে তারা ব্যবসা করতে পারে, নতুন উদ্যোগ শুরু করতে পারে অথবা তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করতে পারে। এই ঋণগুলি সুদবিহীন এবং ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক পরিচালিত।
২.শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: সদস্যদের জন্য প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি চালানো হয়। এর মাধ্যমে সদস্যরা তাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারেন এবং নিজের বা পরিবারের জন্য আয়ের নতুন উৎস তৈরি করতে পারেন। এছাড়া, সমিতি শিশুদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে।
৩.স্বাস্থ্যসেবা: কর্মজীবী মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সমিতি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, চিকিৎসা সহায়তা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে।
৪.আর্থিক সহায়তা ও সঞ্চয় পরিকল্পনা: সমিতি সদস্যদের জন্য সঞ্চয় পরিকল্পনা তৈরি করে এবং ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেয়। সদস্যরা তাদের সঞ্চয়কে নিরাপদে রাখতে এবং প্রয়োজনীয় সময়ে ব্যবহার করতে পারেন।
৫.সমবায় চেতনা ও সহযোগিতা: সমিতির সদস্যদের মধ্যে একটি সহযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে তোলা হয়, যাতে তারা একে অপরের সহযোগিতায় নিজেদের আর্থিক ও সামাজিক উন্নতি ঘটাতে পারে। এটি শুধু সমিতির মধ্যে নয়, বরং তাদের পারিপার্শ্বিক সমাজেও ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসে।
সমিতির সদস্যরা:
কাজকরে জীবনে বাঁচতে শেখা - বাংলাদেশ সোসাইটি সদস্যরা মূলত কর্মজীবী জনগণ, যেমন শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক এবং দিনমজুররা। এই জনগণ বিভিন্ন কারণে আর্থিক অস্বচ্ছলতায় ভুগে থাকেন, এবং সমিতি তাদের জন্য একটি উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে যাতে তারা সুদবিহীন ঋণ পেতে পারেন এবং উন্নত জীবনযাপন করতে পারেন।
ইসলামী অর্থনীতি ও নীতি অনুসরণ:
সমিতি ইসলামী অর্থনীতির নীতি অনুসরণ করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে, যেখানে সুদ, জুয়া, মিথ্যা এবং প্রতারণা থেকে দূরে থাকার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। এর মাধ্যমে একটি ন্যায়সঙ্গত এবং শুদ্ধ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য রয়েছে। সদস্যদের কাছে ইস্যুকৃত ঋণ কোনো ধরনের কৃতজ্ঞতা বা সুদের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং তাদের প্রকৃত প্রয়োজনীয়তাকে কেন্দ্র করে দেওয়া হয়।
উপসংহার:
কাজকরে জীবনে বাঁচতে শেখা- বাংলাদেশ সোসাইটি ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক পরিচালিত একটি উদাহরণস্বরূপ প্রতিষ্ঠান, যা কর্মজীবী জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। এর মাধ্যমে সদস্যরা সুদবিহীন পণ্য ঋণ সুবিধা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সঞ্চয় পরিকল্পনার মাধ্যমে নিজেদের উন্নতি করতে পারছেন। সমিতির লক্ষ্য শুধু অর্থনৈতিক উন্নতি নয়, বরং সদস্যদের সামাজিক ও মানসিক উন্নয়নেও সহায়ক ভূমিকা রাখা। এটি ইসলামী অর্থনৈতিক নীতির বাস্তবায়নে একটি শক্তিশালী উদাহরণ হয়ে উঠেছে এবং দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়তা করছে।